জীবনী

আলবার্ট আইন্সটাইনের জীবনী

বন্ধুরা এখন আমরা জানব আইন্সটাইনের জীবনি সম্পর্কে। প্রথমে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণী জেনে নিন-

  • নামঃ আলবার্ট আইন্সটাইন
  • জন্মঃ ১৪ ই মার্চ ১৮৭৯ উরটেমবার্গ জার্মান
  • মৃত্যুঃ ১৮ ই এপ্রিল ১৯৫৫ প্রিন্সটন যুক্তরাষ্ট
  • ধর্মঃ খ্রিস্টান
  • উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
  • বাসস্হানঃ জার্মানি, ইতালি,সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট
  • জাতীয়তা ঃ জার্মানি
  • কর্মক্ষেএ ঃ পদার্থ বিজ্ঞানি

 

 

আলবার্ট আইন্সটাইন আমার খুব প্রিয় একজন বিজ্ঞানি।  আলবার্ট আইনষ্টাইন(১৮৭৯-১৯৫৫) ইঞ্জিনিয়ার পিতার ঘরে ১৮৭৯সালে এক ইহুদী পরিবারে জন্ম হয় আইনষ্টাইন।বাবা মাঝে মাঝে খেলনা এনে দিতেন পুত্রকে।শিশু আইনষ্টাইনের বিচিত্র চরিত্রকে সেই দিন উপলব্ধি করা সম্ভব হয়নি অভিভাবক,তার শিক্ষকদের।স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝেই অভিযোগ আসত।

পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়া ছেলে,অমনোযোগী আনমনা। ক্লাসের কেউ তার সংগি ছিলনা। সবার পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসতেন। একমাত্র সংগি ছিলেন তার মা।তার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের নানান সুর শুনতেন।আর সাথে ছিল বেহালা।এই বেহালা ছিল আইনষ্টাইনের সারা জীবন এর সাথী। বাবাকে তেমন কাছে পেতেন না আইনষ্টাইন।নিজের কারখানা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি।আনন্দেই কাটছিল তার জীবন।সেই আনন্দে ভরা দিন গুলোর মাঝে হঠাৎ কালো মেঘ ঘনিয়ে আসলো।সেই শৈশবেই আইনষ্টাইন প্রথম অনুভব করলেন জীবনের তিক্ততা।

তারা ছিলেন ইহুদি। কিন্তু স্কুলে মেনে চলতে হত ক্যাথলিক অনুসারীদের নিয়মকানুন।স্কুলের সমস্ত পরিবেশটাই বিস্বাদ হয়ে যায় তার কাছে। দশ’নের বই তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত।পনেরো বছর বয়সে তিনি কান্ট,স্পিনোজা,ইউক্লিড, রচনা পড়ে শেষ করে পেলেন।অবসর পেলে বেহালায় বিঠোফেন,মোৎসোটে’র সুর তুলতেন।এগুলোই ছিল তার সংগি, সাথি। এইসময় বাবার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল। তিনি স্থির করলেন মিউনিখ ছেড়ে মিলানে চলে যাবেন।তাতে যদি ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।সবাই মিউনিখ ত্যাগ করল,শুধু একা রয়ে গেলেন আইনষ্টাইন।সুইজারল্যান্ড এর একটি পলিটেকনিক স্কুলে ভতি’ হলেন। প্রথম পরিক্ষায় পাশ করতে না পারলেও পরেরবার ঠিকই পাশ করেন। বাড়ির আথি’ক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।আইনষ্টাইন অনুভব করলেন যে সংসারের দায়িত্বভার তাকেই গ্রহন করতে হবে।শিক্ষকতার বৃত্তি গ্রহন করার জন্য তিনি পদাথ’বিদ্যা ও গনিত নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলেন।

 

pic albert einstein
pic albert einstein

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে শিক্ষকতার জন্য বিভিন্ন স্কুলে আবেদন করতে শুরু করলেন।অনেকের চেয়ে যোগ্যতা বেশি থাকার পরও কোথাও চাকরি পেলেন না।তার একটাই অপরাধ।তিনি ইহুদী। নিরুপায় আইনষ্টাইন খরচ চালাবার প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়াতে শুরু করলেন।এই সময় আইনষ্টাইন এর স্কুলের সহপাঠিনী মিলেভা মারেক কে বিয়ে করেন।তখন তার বয়স মাত্র ২২। আইনষ্টাইন বুঝতে পারলেন শিক্ষকতার কাজ পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।তখন অফিস এর কেরানির কাজ নিলেন। কাজের ফাঁকেফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন গনিতের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার।তার এই গোপন সাধনার কথা শুধু মিলেভাকে বলেছিলেন “আমি এই বিশ্বপ্রকৃতির স্থান ও সময় নিয়ে গবেষনা করছি।” আইনষ্টাইন এর এই গবেষণায় ছিলনা কোনো ল্যাবরেটরি, ছিলনা কোনো যন্ত্রপাতি।তার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার খাতা কলম আর তার অসাধারণ চিন্তাশক্তি। অবশেষে শেষ হল তার গবেষণা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৬।একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বালি’নের বিখ্যাত পত্রিকা “Annalen der Physik”এর অফিসে। এই পত্রিকায় আইনষ্টাইন ১৯০১ সাল পয’ন্ত ৫ টি রচনা প্রকাশ করলেন

।এইসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে সম্পূন’ নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হ য়েছে। এতে আইনষ্টাইন এর নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল।কিন্তু আথি’ক অবস্থার কোনো সুরাহা হলনা।নিতান্ত বাধ্য হয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়াবার কাজ নিলেন।১৯০৫ সালে প্রকাশিত হল তার আলোর গঠন ও শক্তি সম্পকি’ত রচনা।পরেরটি এটমের আকৃতি প্রকৃতি নিয়ে।তৃতীয়টি ব্রাউনিয়াম মুভমেন্ট এর ক্রমবিকাশ নিয়ে।৪থ’ টি তার বিখ্যাত আপেক্ষিক তত্ত্ব। বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন জগতের দিগন্ত উদ্ভাসিত করল।এই আপেক্ষিকতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তুর সাথে অন্য কোনো বস্তুর তুলনা ।আইনষ্টাইন বলেন, আমরা যখন কোন সময় বা স্থান পরিমাপ করি তখন আমাদের অন্য কিছুর সাথে তুলনা করতে হবে।তার মতে আলোক বিশ্বজগত, কাল এবং মাত্রা আপেক্ষিক। আমাদের মহাবিশ্বে একটি মাত্র গতি আছে যা আপেক্ষিক নয়।এই গতি হচে্ছ আলোক গতি। এই গতি কখনওই পরিবত’ন হয়না। এই সময় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রন এল।আইনষ্টাইনকে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেবার জন্য।অবশেষে ১৯০৭ সালে তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারন অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হলেন।এক সাথে পেটেন্ট অফিসের চাকরিও করেন। বিজ্ঞান জগতে আইনষ্টাইনের নাম ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছিল।বিজ্ঞানী কেলভিনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনষ্টাইনকে আমন্ত্রন জানানো হলো।এখানে তাকে অনারি ডক্টরেট উপাধি দেয়া হল।এরপর তার ডাক এল জামা’নীর সলসবাগ’ থেকে। এখানে জগতবিখ্যাত সব বিজ্ঞানীর সামনে তার প্রবন্ধ পড়লেন আইনষ্টাইন।তিনি বললেন, তাত্ত্বিক পদাথ’বিদ্যার অগ্রগতির পরবতী’ পযা’য়ে আমরা আমরা এমন কোনো এক তত্ত্ব পাব যা আলোর কনাতত্ত্ব এবং তরঙ্গ তত্ত্বকে সময়ের বাধঁনে বাধতে পারবে।

আইনষ্টাইনের এই উক্তির জবাবে বিজ্ঞানী প্লাংক বললেন,”আইনষ্টাইন যে পযা’য়ের চিন্তা করছেন সে পযা’য়ের সময় এখনও আসেনি।এর উত্তরে আইনষ্টাইন তার বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের E=mc`2 উৎপত্তিটি আলোচনা করে বোঝালেন তিনি যা প্রমান করতে চাইছেন তা কতখানি সত্য।১৯০৮ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন তাত্ত্বিক পদাথ’বিদ্যার পদ সৃষ্টি করা হল। রাজনৈতিক মহলের চাপে এই পদে মনোনিত করা হল ফ্রেডরিখ এডলারকে।এডলার নতুন পদে যোগ দিয়েই জানতে পারলেন তাকে আইনষ্টাইন এর পরিবতে’ নিযুক্ত করা হয়েছে।তিনি কতৃ’পক্ষকে জানালেন এই পদের জন্য আইনষ্টাইন এর চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই।তার তুলনায় আমার জ্ঞাত নেহাতই নগন্য। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃ’পক্ষও উপলব্ধি করতে পারলেন এডলারের কথার গুরুত্ব। অবশেষে১৯০৯ সালে আইনউষ্টাইন তার পেটেন্ট অফিসের চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি শিক্ষকতার পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।জুরিখে এসে বাসা বাড়া করলেন। আইনষ্টাইন এখন কেরানি নন, প্রফেসর।কিন্তু মাইনে আগে পেতেন ৪৫০০ ফ্রাংক,এখনও তাই।তবে লেকচার বাবদ সামান্য বেশী। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগে বহু মানুষের সাথে, গুনী বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচয় হয়।এমন সময় ডাক এল জামা’নির প্রাগ থেকে।জামা’ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদাথ’বিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হল।মাইনে আগের চেয়ে বেশী। তাছাড়া প্রাগে গবেষণার জন্য পাবেন বিশাল লাইব্রেরি। ১৯১১ সালে সপরিবারে প্রাগে এলেন আইনষ্টাইন। এর কয়েক মাস আগে তার দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হয়েছে।

অবশেষে দীঘ’ আকাঙ্ক্ষিত জুরিখের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক পেলেন আইনষ্টাইন। ১৯১২ প্রাগ ত্যাগ করে এলেন জুরিখে।এখানে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন মাদাম,কুরি এবং সংগে দুই কন্যা। দুই বিজ্ঞানির মাঝে গড়ে উঠল মধুর বন্ধুত্ব। পাহাড়ি পথ ধরে যেতে যেতে মাদাম কুরি ব্যাখ্যা করেন তার তেজস্ক্রিয়তা আর আইনষ্টাইন ব্যাখ্যা করেন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। একদিন নিজের তত্ত্বের কথা বলতে বলতে এতটাই তন্ময় হয়ে পড়েছিলেন যে, পথের ধারে গতে’র মাঝে গড়িয়ে পড়লেন আইনষ্টাইন। তাই দেখে মেরি কুরির দুই মেয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল।খাদ থেকে উঠে হাসিতে যোগ দিলেন আইনষ্টাইনও

সর্বশেষ কথা হচ্ছে আপনারা এই জীবনি পড়ে আইন্সটাইন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button