জীবনী

ড: মুহাম্মদ ইউনুসের জীবনী : নোবেল প্রাপ্তি সাল, নোবেল প্রাপ্তির বিষয় ও গ্রামিন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকাল

 

বন্ধুরা এখন আমরা জানব ড:মুহাম্মদ ইউনুস সম্পর্কে।

 

           নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস

 

  • ভূমিকা :

স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের জনগণ। আর এ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন এক স্বাপ্লিক, যার নাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৩ অক্টোবর নরওয়ের নােবেল কমিটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে যৌথভাবে ২০০৬ সালের নােবেল পুরস্কার প্রদানের ঘােষণা দেয়। বাংলাদেশে তিনিই হলেন প্রথম নােবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব। সর্বোচ্চ আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে ক্ষণকালের জন্য হলেও বিশ্ববাসী বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণাকে পাল্টাতে বাধ্য হয়। এই বাংলাদেশে যেখানে আমরা প্রতিনিয়তই নানা হতাশার মধ্যে ডুবে থাকি , আমাদের বড় বড় অর্জন যখন প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয় হয়, সমাজে যখন ফিরে ফিরে আসে অন্ধকার, সেই সমাজেরই একজন ড. ইউনূস যখন এত বড় সম্মান বয়ে আনেন, তখন আমাদের হীনম্মন্যতা দূর হয়। আমাদের বুক গর্বে ভরে ওঠে, আমরা
আনন্দ-আবেগ, ভালােবাসয় উদ্বেলিত হই।

  • জন্ম ও অন্যস্থানঃ

২৮ জুন, ১৯৪০ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে এক স্ক্রাপ্ত মুসলিম পরিবারে অনুগ্রহণ করেন। বাবা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর ও মাতা সুফিয়া খাতুন ।

  • শিক্ষাজীবনঃ

১৯৪৫ সালে গ্রামের প্রাইমারি স্কুল মহজান ফকিরের স্কুলেই শুরু হয় ড. ইউনূসের লেখাপড়া। ১৯৪৭ সালে তাঁকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের লামাবাজার প্রাইমারি স্কুলে। স্কুলটি ছিল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। প্রাইমারি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালের মধ্যে তিনি প্রথম হন। ক্লাস ফাইভ ও সিক্স পড়েন চট্টগ্রাম একই স্কুলে। বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জে প্রথম হন । বাবা চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি করাতে চাইলেও শিক্ষকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানাে হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে । ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ৩৯ হাজার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর ১৯৫৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। ১৯৬১ সালে তিনি এমএ পাস কনে। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে দেশ ত্যাগ।

  • শিক্ষকতা জীবনঃ

লেখাপড়া শেষ হলে কিছুদিন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও রেহমান সােবহানের তত্ত্বাবধানে ব্যুরাে অব ইকনমিকসে কাজ করেন। এর মধ্যেই প্রভাষক হিসেবে সরকারি চাকরি পান চট্টগ্রাম কলেজে। ১৯৬১ সালে তিনি এতে যােগ দেন। ১৯৭০ সালের দিকে পিএইচডি করার সময় টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭২ সালের জুন মাসে চাকরি ছেড়ে দেশে
ফিরে আসেন। দেশে আসার পর অধ্যাপক নূরুল ইসলাম জোর করে তাকে পরিকল্পনা কমিশনে চাকরি দেন। কিন্তু মাস তিনেক পর তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করেন শিক্ষকতা। সর্বোচ্চ বেতন দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক করে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়ােগ দেয়া হয় তাকে।

  • ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তনঃ

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জনতা ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ম্যানেজরাকে বললেন সুফিয়াদের মতাে দরিদ্র কর্মীদের ঋণ দেয়ার জন্যে। ম্যানেজার রাজি হলেন না। জামানত না থাকলে ঋণ দেয়ার আইন নেই। অন্য একটি শাখায় গিয়েও একই কথা শুনলেন। এভাবে ছয় মাস ঘুরে নিজে গ্যারান্টার হয়ে জোবরা গ্রামে শুরু করলেন কাজ। টাকা ঋণ নিল জোবরা
গ্রামের মানুষ, আবার পরিশােধও করল। ব্যাংক বলল, এক গ্রামে হয়েছে, দুই গ্রামে হবে না। কেউ বললেন পাঁচ গ্রামে হবে না। কিন্তু ড. ইউনূস দমে যাওয়ার পাত্র নন, তিনি এই ঋণ কার্যক্রম আশপাশের গ্রামেও শুরু করে দিলেন এবং সাফল্য পেলেন।

  • গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাঃ

জোবরা গ্রামের ক্ষুদ্রঋণ থেকেই ক্রমে ক্রমে ১৯৮৩ সালের ১ অক্টোবর গ্রামীণ ব্যাংক’ নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলাে । ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রমাণ করলেন, ঋণ মানুষের মানবিক অধিকার। গরিবদের ঋণ পেতে হলে কোনাে বন্ধকীর দরকার হবে না। ব্যাংকই তাদের কাছে যাবে, ব্যাংকে তাদের আসতে হবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য আজ দুনিয়াজোড়া
আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যারা এই ব্যাংকের ঋণ পেয়েছে তাদের জীবনে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন। আজ গ্রামীণ ব্যাংক একা গরিবদের যে পরিমাণ ঋণ দেয়, বাংলাদেশের সবগুলাে জাতীয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকও তার সমান ঋণ দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তখন দারিদ্র বিমােচনের জন্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার জন্য তার শাসনামলে ড. ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যান এবং তার সুপারিশ শােনেন।
নােবেল পুরস্কার । ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর নরওয়ের নােবেল শান্তি কমিটি ড. মুহম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে যৌথভাবে নােবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে। এই পুরস্কারের আর্থিক মূল্যমান ১৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রায়।

  • ড. ইউনূসের পুরস্কার পসরাঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস নােবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও ৬০টি পুরস্কার লাভ করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নানা সম্মানে ভূষিত ইউনূসের খ্যাতি আজ আকাশ ছোঁয়া। ওআন্তর্জাতিকভাবে প্রাপ্ত পুরস্কারের তালিকা তুলে ধরা হলঃ রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ১৯৭৮, বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ১৯৮৫, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৮৭, রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এ খান মেমােরিয়াল পােন্ড মেডেল পুরস্কার ১৯৯৩, ডা. মােহাম্মদ ইব্রাহিম পােন্ড মেডেল পুরস্কার ১৯৯৪, ঢাকা মেট্রোপলিটান রােটারি ক্লাবফাউন্ডেশন পুরস্কার ১৯৯৫, আইডিইবি স্বর্ণপদক ২০০২ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সােসাইটি স্বর্ণপদক ২০০৫। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন দেশের ১৩টি সহ মােট ২২টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন ড. ইউনূস। বিশেষ সম্মানসূচক পদবি পান জাতিসংঘ ও ফ্রান্স থেকে। ২০০২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক দেয়া হয় International Goodwill Ambassador for UNAIDS. ২০০৪ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক তাকে প্রদান করেন সে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘লিজিয়ান অব অনার’। বিভিন্ন দেশ থেকে তাকে
সম্মানসূচক পদবিতেওভূষিত করা হয়।

  • উপসংহারঃ                                                      

পৃথিবীর সবচেয়ে গৌরবের ও সম্মানের পুরস্কার। দীর্ঘ বছরের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনজন বাঙালিকে
নােবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছে সুইডিশ একাডেমী। এর সূচনা হয়েছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি’ কাব্যের মাধ্যমে ১৯১৩
সালে। ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নােবেল পুরস্কার পান অমর্ত্য সেন এবং ২০০৬ সালে শান্তিতে নােবেল পুরষ্কার লাভ করেন ৬, মুহাম্মদ ইউনূস। কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের এটাই প্রথম নােবেল পুরস্কার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের গর্ব। তার অর্জিত নােবেল পুরস্কার শুধু তার সম্মানই নয় । এ আমাদের জাতির জন্য সম্মান এবং গৌরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button