কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা:ডিমে ক্যালরি,দাম ও ছবি

Table of Contents
বন্ধুরা এখন আমরা জানব কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে।
কে না পছন্দ করে ডিম আর যদি সেটা হয় কোয়েল পাখির।কোয়েল পাখির ডিমের বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে ইদানিংআমাদের দেশে। । দিন দিন অনেক কোয়েল পাখির খামারওগড়ে উঠছে। এজন্য এ ডিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারের সম্পর্কে অনেকে জানতে চান

আমাদের প্রথমেই যেটা মাথায় রাখাতে হবে সেটা হচ্ছে কোয়েলের ডিম কিন্তু আকারে অনেকটা ছোট। কোয়েল পাখির একটি ডিমের ওজন প্রায় ৯-১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি মুরগির ডিমের ওজন ৫০-৬০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে । প্রতি ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে প্রায় ১৫৮ গ্রাম ক্যালরি বিদ্যমান থাকে। এই কোয়েলের ডিম মুরগির ডিমের চেয়েও ৩-৪ গুন বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। প্রতেকটা ডিমের দাম প্রায় ২-৩ টাকা। তাই পরিমাণের দিক চিন্তা করলে কোয়েলের ৫টি ডিম একএে করলে একটি মুরগির ডিমের সমান হয়। এখন তাহলে আসুন জেনে নিই কোয়েলের ডিম কি পরিমাণ পুষ্টিকর এবং এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে ।
কোয়েলের পাখির ডিম কতটা পুষ্টিকর।
এটি প্রোটিনের একটি ভালো ও শক্তিশালী উৎস হিসেবে কাজ করে । এতে রয়েছে বেশ কিছু উপকারী কোলেস্টেরল, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি১’, ভিটামিন ‘বি২’ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। মুরগির ডিমের চেয়েও কোয়েলের ডিমের মধ্যে ভিটামিন ‘বি১’ ছয় গুণ এবং ভিটামিন ‘বি২’ ১৫ গুণ বেশি রয়েছে । এই ডিমের মধ্যে বিদ্যমান প্রোটিন খুবই পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
সংক্ষেপে জেনে নিই কোয়েলের ডিমের কিছু উপকারিতা।
হাড় ও মাসেল ভালো রাখে
শরীরের শক্তি বাড়ায়
স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে
ক্যান্সার প্রতিরোধোক
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
চুল, চোখ,যকৃত, ত্বকের সুরক্ষায়
কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
অ্যালার্জিজনীত সমস্যা নিরাময়
দেহকে পরিষ্কার রাখে

এবার আমরা জানব কোয়েলের ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
- হাড় ও মাসেল ভালো রাখে
কোয়েল এর ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় প্রোটিন। একটি কোয়েলের ডিমে প্রায় ২ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে।এই প্রোটিন হাড় ও মাসেলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- শরীরের শক্তি বাড়ায়
শরীরের জন্য বেশ ভালো একটি শক্তির উৎস হতে পারেকোয়েলের ডিম। কোয়েলের ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন ও আয়রন শরীরের এনার্জি লেভেলকে বাড়িয়ে তুলতে অনেক বিশেষ ভূমিকা পালন করে । যে কোনো ধরণের প্রোটিনই বহু অ্যামিনো অ্যাসিডের অণু দ্বারা তৈরি বিশেষভাবে চেইন দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে । কোয়েলের ডিমের ভিতরে বিদ্যমান অ্যামিনো অ্যাসিড অনেকটা প্রোফাইল তৈরি করেও দেখা যেতে পারে , এতে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড । এদের মধ্যে কয়েকটি অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের ব্লাড শুগার নিয়ন্ত্রণে অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অন্য কয়েক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিডও রয়েছে যারা টিস্যুর ক্ষয়রোধ ও নতুন টিস্যু গঠন করতে ও সহায্য করেব । এসব ছাড়াও কোয়েল পাখির ডিমেের মধ্যে পাওয়া যায় লাইসিন নামক এক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড, যেটি শরীরেকোলাজেন ও এনজাইম, অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং হরমোন উৎপাদনে দারুনভূমিকা পালন করে । শরীরে নতুনভাবে রক্ত উৎপাদনে আয়রনের ভূমিকা বেশ ভুমিকা রয়েছে। শরীরে যদিব আয়রনের ঘাটতি হয় তাহলে অ্যানেমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে , এর ফলে ঘন ঘন ক্লান্তিভাব অনুভব করা ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নানান সমস্যা দেখা যায়।
আরও দেখুন:-ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত
আমাদের মস্তিষ্কের(Brain) কার্যপক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি১২, থাইমিন (ভিটামিন বি১) ও ভিটামিন বি২ খুবই দরকার । প্রয়োজনীয় পরিমাণ অনুযায়ী ভিটামিন বি১২ আমাদের মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির ক্ষয় রোধ করতে অনেক সাহায্য করে । কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন বি”১২” এবং রিবোফ্লাভিন ভিটামিন “বি১২” এর একটি অন্যতম ভালো উৎস। এতে রয়েছে কিছু পরিমাণ থাইমিনও ভিটামিন বি১ ।
- ক্যান্সার প্রতিরোধোক
সেলেনিয়াম হচ্ছে কোয়েলের ডিমের মধ্যে প্রাপ্ত খণিজ উপাদানগুলোর একটি। এই খণিজ দ্রব্যটি প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধআ কমাতে সহায়তা করে। সেলেনিয়ামের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট যেটি আমাদের দেহকোষকে ক্ষয় হওয়া ও জারণ থেকে সুরক্ষিত রাখে ।সেলেনিয়ামের অভাব লক্ষ্য করা যায় এইচ আই ভি(HIV) ও ক্রন’স ডিজিজে আক্রান্ত মানুষের দেহে। স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের শরীরে সেলেনিয়ামের ঘাটতি তেমন পরিলক্ষিত না হলেও প্রতিদিনের খাদ্যে সেলেনিয়ামযসমৃদ্ধ খাদ্য রাখাটা শরীরের জন্য অনেক ভালো। সেজন্য কোয়েল পাখির ডিম বিশেষ সহায়তা করে থাকে।

- দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
কোয়েলের ডিম উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’-এর একটি ভালো উৎস । এতে করে কোয়েলের ডিম খেলে দৃষ্টিশক্তি আরো প্রখর হয়। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের পেশির অনেক দেখাশোনা করে থাকে । এটি সহজে চোখের ছানি পড়তে দেয়না । চোখের অনেক ধরণের কিছু সাধারণ সমস্যাও দূরীভূত করে ।
- চুল, চোখ,যকৃত, ত্বকের সুরক্ষায়
রিবোফ্লাভিন, যেটি মূলত ভিটামিন বি ২ নামেও বেশ পরিচিত, দেহের বিভিন্ন ধরণের শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় । সাধারণভাবে ভিটামিন “বি ২” সহ অন্যান্য “বি “শ্রেণীর ভিটামিনের উপাদান আমাদের দেহের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে । দেহের লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদন করতে রিবোফ্লাভিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখে । কোয়েলের ডিমেের আকার অনুপাতে এটিতে প্রচুর রিবোফ্লাভিন রয়েছে। ১-২টি কোয়েলের ডিম প্রত্যেকদিন খেলে এটি আমাদের লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতায় অনেক ভূমিকা পালন করে।
- কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষার্থে
উল্লেখযোগ্য বেশ পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ রয়েছে এই কোয়েল পাখির ডিমের মধ্যে । এলডিএল (LDL) নামক বাজে কোলেস্টেরলের কার্যকারিতা রুখতে দরকার হয় এইচডিএল(HDL) নামক উপকারী কোলেস্টেরলের । কোয়েল পাখির ডিমের ফ্যাটের প্রায় ৬০ শতাংশই এইচডিএল রক্ষার্থে ব্যবহৃগ হয়ে থাকে । এর ফলে দেহে ভালো এবং কোলেস্টেরলের মাএা ভারসাম্য অবস্থার মধ্যে থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
কোয়ল পাখির ডিমে থাকা পটাসিয়ামের উপস্থিতি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে । এটি খনিজ রক্তবাহী নালি ও শিরাগুলোতে অনেক আরাম দিয়ে থাকে । ফলে এগুলো সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে সক্ষম। তুলনামূলকভাবে কোয়েলের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে অনেক বেশি পটাসিয়াম রয়েছে ।
- অ্যালার্জিজনীত সমস্যা নিরাময়
ওভোমিউকয়েড নামক রয়েছে ডিমের সাদা অংশে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জির মতোই দেহের ভিতর কাজ করে থাকে । যদি কোনো রক্ত জমাট বাঁধা, ইনফ্লামেশনসহ অ্যালার্জি বিভিন্ন লক্ষণজনীত সমস্যা থাকে বেশি করে কোয়েলের ডিম খাওয়া দরকার উপকারী। এসব ছাড়াও সুষ্ঠুভাবে বিপাকক্রিয়া ও শারীরিক শক্তি বর্ধনের জন্য এই ডিমের উপর ভরসা রাখতে পারেন ।
- দেহকে পরিষ্কার রাখে
দেহকে বিষমুক্ত (Toxin)করণ একটি অতি জরুরি বিষয়। পরিবেশের নানান ক্ষতিকর উপাদান দেহের মধ্যে প্রবেশ করে অনেক দূষণ ঘটাচ্ছে। রক্তপ্রবাহ থেকে এসব ক্ষতিকর উপাদান বের করতে কোয়েলের ডিম দারুণ ভূমিকা রাখে। এই ডিম মূত্রথলি এবং কিডনিতে পাথর হতেও বাধা দেয় এবং কিডনিকে অনেক সুরক্ষিত রাখে।
শেষ কিছু কথা জেনে রাখুন
এই ডিমেের মধ্যে সামান্যতম পরিমাণে ফ্যাট সম্পৃক্ত আছে। এজন্য এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক না। তা ছাড়া অতিরিক্ত কোনো কিছুই একদমই ভালো না।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার মতো যেকোনো ডিমই নিঃসন্দেহে খাদ্য তালিকায় রাখার মতো একটি ভালো খাবার। কোয়েল পাখির ডিমও ঠিক তাই। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের জন্য ভালো উপাদান হতে পারে কোয়েলের ডিম। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে যে ডিমে আছে কিন্তু বেশ ভালো পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল যেটি অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের সমস্যাও সৃষ্টি করে দিতে পারে। তাই যদি আপনার ডায়বেটিস থাকে অথবা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন তবে , ডিম খাওয়ার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
এটি পড়ে হয়তো আপনারা অনেক কিছু জানবেন । এবং অবশ্যই ভালো লেগেছে কিনা তা কমেন্টে জানাতে ভূলবেন না।