রচনা

বাংলা প্রবন্ধ রচনাঃস্বদেশপ্রেম,রচনা উক্তি

       রচনার নামঃ স্বদেশপ্রেম


table of content

১.ভূমিকা
২.দেশপ্রেমের স্বরূপ
৩.স্বদেশপ্রেমের বিকাশ
৪.দেশপ্রেমের গুরুত্ব
৫.স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত
৬.স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম
৭.দেশপ্রেমের নামে নৈরাজ্য
৮.উপসংহার


              স্বদেশপ্রেম

ভূমিকা:

         “স্বদেশের উপকারে নাই যার মন,
             কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।

স্বদেশপ্রেম হলাে নিজ দেশের প্রতি এক ধরনের অনুরাগময় পবিত্র ভাবাবেগ। এটি মানব চরিত্রের সুকুমার বৃত্তিগুলাের অন্যতম। মানুষের মধ্যে সহজাতভাবেই এ গুণের উদ্ভব হয়। সুষ্ঠু শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে এ গুণের বিকাশ ঘটে। দেশপ্রেম দেশের মঙ্গল ও উন্নতির জন্য সবকিছু সঠিক ও নিয়মসিদ্ধভাবে করতে মানুষকে উৎসাহিত করে। তাই মানব চরিত্রের এ বিশেষ গুণটির অনুশীলন দেশ, জাতি তথা বিশ্বের জন্য
কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনতে সক্ষম।

দেশপ্রেমের স্বরূপ :

যে দেশে জন্ম, যে দেশে বড় হওয়া, যে দেশে জীবন অতিবাহিত করা, তাই তাে স্বদেশ। আর স্বদেশ বা নিজের দেশের প্রতি মানুষের সুগভীর অনুরাগ বা ভালােবাসার নামই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশ মায়ের সাথে তুলনীয়। মা যেমন তার কোলের সন্তানকে জন্মের পর থেকে অসীম মমতায় আগলে রেখে লালন-পালন করেন, তেমনি স্বদেশও তার বুকে ধারণ করে আলাে-বাতাস, অন্ন-জলে আমাদের লালন-পালন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন মনীষীর স্বদেশপ্রেম সম্পর্কিত মতামত পর্যালােচনা করলে স্বদেশপ্রেম প্রকাশক তিনটি প্রধান মাধ্যমের কথা জানা যায়। এগুলাে হচ্ছে মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি। তাই বলা যায় মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি অনুরাগ বা ভালােবাসার সমন্বয়ই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের বিকাশ :
মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি স্বদেশপ্রেম বিকাশের
ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একেকটি পর্যায়। এ পর্যায়সমূহ সফলতার সাথে অতিক্রমের মাধ্যমে
একজন মানুষ তার স্বদেশপ্রেমের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। মা দশমাস গর্ভধারণ করে অনেক কষ্টের মাঝেও পরম মমতায় আমাদের পৃথিবীর আলাে দেখান। মায়ের সাথে আমাদের রয়েছে নাড়ির বন্ধন যা কোনােভাবেই ছিন্ন হবার
নয়। সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালােবাসা সন্তানকে শেখায় ভালােবাসতে। মায়ের স্নেহপ্রসূত ভালােবাসার এ পাঠ মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে।

“যে ভাষাতে প্রথম বােলে ডাকনু মায়ে মা মা                  বলে”-সে ভাষাই আমাদের মাতৃভাষা।

এ ভাষার বর্ণালি ছটায় আমরা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করি আমাদের অন্তরেরঅনুভূতি ও আকুতি। মাতৃভাষাকে ভালােবেসে ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হিসেবে অন্তরের অন্তঃস্থলে অধিষ্ঠিত করার দ্বারা মানুষের স্বদেশপ্রেমের বিকাশ পরিপূর্ণতার দিকে আরেক ধাপ অগ্রসর হয়। বৃহত্তর অর্থে মানুষ ধরিত্রীর সন্তান। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে পৃথিবী তার জন্মপরিচয়ের ঠিকানা নয়। পৃথিবীর নির্দিষ্ট যে ভূ-খণ্ডে মানুষ জন্মগ্রহণ করে, যে মাটির
আলাে-বাতাস, অন্ন-জলে সে বেড়ে উঠে, তা-ই তার জন্মভূমি তথা মাতৃভূমি ককক জন্মমভূমির ভৌগােলিক ও সামাজিক পরিবেশ, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতির সাথে পরিচিত হতে হতে জন্মভূমির এক চির আরাধ্য, চির পবিত্র, চির ভাস্বর মাতৃসম ভাবমূর্তি গড়ে উঠে মানুষের হৃদয়ে। অতঃপর সেই তীব্র আবেগ স্বদেশ বন্দনার বাণী হয়ে ঝরে পড়ে-

সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগাে তােমায় ভালােবেসে।”

দেশপ্রেমের গুরুত্ব :
স্বদেশপ্রেম এমন একটি গুণ যা একজন মানুষকে দেশের কল্যাণার্থে তার স্বার্থ, স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ এমনকি নিজ জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করে। স্বদেশপ্রেমের অনন্ত স্পৃহা মানুষকে দায়িত্বপরায়ণ, উদ্যমী ও গভীর আত্মপ্রত্যয়ী করে তােলে। দেশপ্রেমিক দেশবাসীর দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত ও সম্মানিত হন। ফলে মানুষের মধ্যে জাতির কল্যাণ চিন্তা জাগ্রত হয়। দেশপ্রেমের মহৎ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিটি
মানুষ তার স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দেশের জন্য কাজ করে। একটি সমৃদ্ধ জাতি, উন্নত দেশ, সুখী মানুষ সবই স্বদেশপ্রেমের অবদান। অন্যদিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেওস্বদেশপ্রেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের প্রিয় নবি হযরত মুহম্মদ (স.) বলেন, “তুববুল ওয়াতান মিনাল ঈমান” অর্থাৎ “স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।” অন্যান্য ধর্মেও একইভাবে স্বদেশপ্রেমকে মহিমান্বিত করা হয়েছে। স্বদেশপ্রেমের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আত্মােৎসর্গকারী ব্যক্তি অমর হয়ে থাকেন।

আরও দেখুনঃ বেকার সমস্যা ও তার প্রতিকার।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত :
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুগে যুগে অনেক মহাপুরুষ বিভিন্নভাবে নজির স্থাপন করে গেছেন। নিজ দেশের পবিত্র মাটিকে
শত্রুর বিষাক্ত নিঃশ্বাস থেকে মুক্ত করতে অনেক দেশপ্রেমিক নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। স্বদেশের মাটি থেকে ইংরেজদের তাড়াতে গিয়ে তিতুমীর হাসিমুখে তার বুকের রক্তঢেলে দিয়েছিলেন, স্বদেশের গান গেয়ে বালক ক্ষুদিরাম ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছিল, নজরুণ কারাগারের শিকল ভাঙার গান গেয়েছিলেন। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য শহিদহয়েছেন, রফিক, বরকত, সালাম জব্বার প্রমুখ। বাংলার মাটি থেকে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার কারাবরণ
করেছিলেন। স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন, দুই লাখ মা-বােন তাদের সম্মান বিসর্জন দিয়েছিলেন। অর্থাৎ দেশমাতৃকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েএরা স্বদেশের বৃহৎ স্বার্থে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। তা ছাড়া রানা প্রতাপ, শিবাজী, প্রফুল্ল চাকী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ দেশপ্রেমিক নিজেদের জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম :
নদী যেমন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে দুর্বার বেগে ছুটে চলে সাগর পানে, তেমনি স্বদেশপ্রেমের মহিমান্বিত বীণার তারে মুহুর্মুহু অনুরণিত হয়
বিশ্বপ্রেমের অনিন্দ্য সুরমূৰ্ছনা। তাই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমের মধ্যে কোনাে বিরােধ থাকতে পারে না। স্বাদেশবাসীকে ভালােবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশ্ববাসী 5 ভালােবাসতে শেখে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, সম্প্রদায়ের উর্ধ্বে মানুষ বিশ্বপ্রেমের এই বাণীকে জাতীয় জীবনে গ্রহণ করলেই সংকীর্ণ অন্ধ জাতীয়তাবােধ থেকে আমাদের মুক্তি আসবে।বিশ্বকবির লেখায়ও আমরা সে কথারই প্রমাণ পাই-

“ও আমার দেশের মাটি, তােমার পরে ঠেকাই মাথা
তােমাতে বিশ্বময়ীর- তােমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।”

দেশপ্রেমের নামে নৈরাজ্য :
স্বদেশপ্রেম হবে নিষ্কলুষ ও নির্লোভ। কিন্তু
স্বদেশপ্রেমের মহান এ আদর্শ বিস্মৃত হয়ে দেশপ্রেমের নামাবলি গায়ে জড়িয়ে অনেকে
ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, অনেক রাষ্ট্রনায়ক কায়েম করে একনায়কতন্ত্র। এরা দেশপ্রেমিক নয় বরং এরা দেশ ও জাতির শত্রু। এদের কারণেই না,
ও জাতি বিপর্যয়ের মুখােমুখি হয়। ইতালির মুসােলিনি, জার্মানির হিটলার-এ স্বদেশপ্রেমের ইতিহাসে কলঙ্ক। এরা কেবল নিজের দেশের অশুই ঝরায়নি, বিশ্বমায়েরও অশ্রু ঝরিয়েছে। তাই মানুষ তাদের কথা স্মরণ করে তীব্র ঘৃণার সাথে।

উপসংহার:

স্বদেশপ্রেম মানুষকে স্বার্থপরতা, সম্প্রদায় ও গােষ্ঠীগত সংকীর্ণতা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে তুলে এক স্বপ্নিল ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সক্ষম করে তােলে। অসংখ্য স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিকের আত্মদানের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের সামনে আজ একবিংশ শতাব্দীর নতুন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সকল জড়তা ও পশ্চাৎপদতাকে পেছনে ফেলে শৌর্য-বীর্য- সমৃদ্ধিতে বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানাের। এজন্য আমাদেরকে দেশ গঠনের কাজেস্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।
উপসংহার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button