রচনা

বাংলা রচনা: ছাত্রজীবন/ ছাত্রজীবনে দায়িত্ব ও কর্তব্য

রচনার নাম : ছাত্রজীবন অথবা, ছাত্রজীবনে দায়িত্ব ও কর্তব্য

ভূমিকা : মানবজীবনের যে সময়টুকু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যােগ্য নাগরিক ও যথার্থ জ্ঞানী করে তােলার কাজে ব্যাপৃত থাকে, তাকে ছাত্রজীবন বলে। ছাত্রজীবন জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতির সময়। সঠিক প্রস্তুতির ওপরই নির্ভর করে প্রবর্তী কর্মজীবনের উজ্জ্বল সাফল্য।

ছাত্রজীবনের স্বরূপ : ছাত্রজীবন উদ্যমতায় পরিপূর্ণ। এ জীবন শৃঙ্খলায় ভরপুর। তাই
এ জীবন সৈনিকের জীবনের সঙ্গে তুলনীয়। এ জীবনে পরীক্ষা নামক বাধার দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর ডিঙিয়ে একজন ছাত্র মেতে উঠে বিজয়ের আনন্দে। পরীক্ষা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা সে সঞ্চিত রাখে ভবিষ্যৎ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে। মূলত ছাত্রজীবনের স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে জীবনের শেষ পর্বে মানুষ ছাত্রজীবনের অম্লমধুর স্মৃতিকেই বেশি রােমন্থন করে।

ছাত্রজীবনের মূল্য : ছাত্রজীবনের মূল্য অত্যধিক। ছাত্রজীবন মানবজীবনের
সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ছাত্রজীবনকে ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়ও বলা যায়। এ
সময়ে যেমন বীজ বপন করা হয়, ভবিষ্যতে তেমন ফলই পাওয়া যায়। ইমারতের ভিত্তি
সুগঠিত না হলে যেমন ইমারত শক্ত হয় না, তেমনি বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষা লাভ না করলে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনও উজ্জ্বল হয় না। এ সময়ে নিয়মিত জ্ঞানানুশীলন করলে ভবিষ্যৎ জীবন সফল ও সুখময় হয়ে উঠে। তবে এ জ্ঞানানুশীলন শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রতিযােগিতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য আমাদের দেশের ছাত্রদেরকে বইপত্রের জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে জীবন ও বাস্তবমুখী জ্ঞানার্জন করতে হবে। এভাবেই যথার্থ জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির সম্প্রসারণ ঘটবে।

আরও পড়ুন: -রচনা: মানব কল্যাণে বিজ্ঞান/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান(২০পয়েন্ট)

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য : অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য। সংস্কৃতে একটি কথা আছে- “ছাত্ৰনং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। তবে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। পাঠ্যবিষয়ের সাথে সাথে তাদের বহির্জগতের জ্ঞানভাণ্ডার হতে জ্ঞান আহরণেরও চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে কর্মী ও
জ্ঞানী করে তােলাই ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হতে হবে। জীবনের সব ক্লান্তি, হতাশা, অবিশ্বাস দূর করে দৃঢ় প্রত্যয় ও সৎ সাহস নিয়ে ছাত্রদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের উচিত ত্যাগ ও সত্যের অভিমুখী হওয়া। তাদেরকে সুস্থ ও সবল মনের অধিকারী হতে হবে। ছাত্রদের উচিত অনাড়ম্বর জীবন্যাপন করা। উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তাদেরকে প্রকৃত মানুষ করতে সহায়তা করবে। মিথ্যা পরিহার করা, নকল প্রবণতাকে ঘৃণার চোখে দেখা ছাত্রদের দায়িত্ব।
সৎকথা, সদাচরণ, সদালাপ ছাত্রদের ভূষণ। সবরকম লােভ-মােহ ত্যাগ করে সত্য ও
ন্যায়ের পথে চলা ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ ছাত্ররা পথভ্রষ্ট হলে জাতির
ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে বাধ্য।

চরিত্র গঠন : চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান।
ছাত্রদের চরিত্রের উপরই জাতির চরিত্র নির্ভরশীল। তাই চরিত্র গঠনের দিকে ছাত্রদের
বিশেষ তৎপর হতে হবে। লেখাপড়ার সাথে সাথে তাদেরকে বিনয়, শিষ্টাচার, সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি সদগুণের অধিকারী হতে হবে।

স্বাস্থ্য গঠন : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই স্বাস্থ্য গঠনের দিকে ছাত্রদের বিশেষ নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্য ভালাে না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। প্রত্যেক ছাত্রকে স্বাস্থ্য গঠনের নিয়মগুলাে মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া নিজের কাপড় চোপড়, আসবাবপত্র ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষক ও পিতামাতার প্রতি কর্তব্য : পিতামাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শন করা ছাত্রদের আর একটি প্রধান কর্তব্য। পিতামাতা আছেন বলেই পৃথিবীতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। পিতামাতা ও শিক্ষকদের মাধ্যমেই ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ। তাই তারা যা আদেশ বা নিষেধ করেন তা প্রত্যেক ছাত্রের মেনে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে পিতামাতা ও শিক্ষক সর্বদাই আমাদের মঙ্গল চান।

আরও পড়ুন:- বাংলা রচনা: শ্রমের মর্যাদা

পারিবারিক দায়িত্ব : পরিবারের সকলের আদর, যত্ন, স্নেহ, মায়া, মমতার মধ্যে বেড়ে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই সবার আগে তাদের পরিবারের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়ােজন। বাবা-মা, ভাই-বােনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং তার খোঁজ-খবর নেয়া তাদের দায়িত্ব। ভবিষ্যৎ জীবনের যে বিশাল গুরুদায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হবে, তার অনুশীলন শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। এজন্য তাদেরকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সহানুভূতি ও আস্থা অর্জন করতে হবে।

সামাজিক দায়িত্ব : “Man is a social animal”- অর্থাৎ মানুষ সামাজিক জীব।
তাই একজন ছাত্রকেও সমাজে বসবাস করতে হয়। আর এ সমাজের একটি সচেতন অংশ হচ্ছে ছাত্রসমাজ। মিথ্যা ও জরা-জীর্ণতাকে মুছে ফেলে, কুসংস্কার ও গোঁড়ামিকে ঝেড়ে ফেলে একটি সুস্থ, স্বাভাবিক, উন্নত ও সুন্দর সমাজ গড়ার দায়িত্ব আজকের ছাত্রসমাজের। বিশ্বমানবতা ও মানবিকতার বিজয় কেতন ছাত্রদের হাতেই। তারা বুভুক্ষু মানুষের পাশে দাড়াতে পারে। আশাহীন বুকে জাগাতে পারে আশা। বিভিন্ন ধরনের সংঘ, স্কাউটিং এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক ফোরামের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা এ দায়িত্ব পালন করতে পারে।

রাজনৈতিক দায়িত্ব : একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে দেশের ছাত্র- ছাত্রীদেরকে কখনাে কখনাে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারা প্রয়ােজনে কলম ছেড়ে অস্ত্র ধরে। জীবনকে বাজি রেখে বীরদর্পে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকাই মুখ্য ছিল। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এর জ্বলন্ত প্রমাণ। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এদেশের ছাত্ররা। যুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশকে পুননির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে
ছাত্ররা।

বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন : বইয়ের পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে জ্ঞানার্জনে পাঠ্যতালিকা বহির্ভূত ভালাে বই, পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছাত্রদের। সেই সাথে তাদেরকে আধুনিক জ্ঞান বিদ্যায় পারদর্শী হতে হবে। লেখাপড়ার অবসরে তাদের খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে। এতে করে তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম হবে।

দেশের প্রতি কর্তব্য : দেশের প্রতি কর্তব্য পালন ছাত্র-ছাত্রীদের গুরুদায়িত্ব। দেশের কল্যাণ সাধন ও অজ্ঞ মানুষকে আলাের পথে আহ্বান করা তাদের কাজ। আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের উচিত মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তােলা। শিক্ষার আলাে ছড়ানাের কাজেও তাদের আত্মনিয়ােগ করার যথেষ্ট অবকাশ আছে। নিপীড়িত মানুষের পাশে বিপদের দিনে ছাত্ররা দাঁড়াতে পারে। এভাবে তারা দেশমাতৃকার সেবায় এগিয়ে আসতে পারে।

উপসংহার :আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। আজ যারা ছাত্র দুদিন পর তারাই হবে দেশের দায়িত্বশীল নেতা ও কর্মী। তাই প্রত্যেক ছাত্রকে বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে দূরে থেকে সৎ, চরিত্রবান ও
আত্মনির্ভরশীল আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। এতে দেশের প্রকৃত
উন্নতি ও সমৃদ্ধির সূচনা হবে এবং তাদের কর্মপ্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের
প্রগতির ধারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button