সময়ানুবর্তিতা রচনা (JSC, SSC, HSC)
রচনার নামঃ সময়ের মূল্য।
ভূমিকা : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে-
“Lost property can be gained by hard labour, Lost health can be gained by medicine, But time, once lost is lost forever.”
সময় নিরবধি, অনাদি, অনন্ত, নিরাকার, অদৃশ্য। সৃষ্টির আদিকাল থেকে সময়ের যাত্রা শুরু হয়েছে এবং পৃথিবীর ধ্বংস পর্যন্ত সে যাত্রা চলবে। সময়ের এ ছুটে চলার কোনাে শেষ নেই, এমনকি একে প্রতিহতও করা যাবে না। তাই বলা হয়, “Time and tide wait for none.” সময়ের এ অনন্ত প্রবাহের মাঝে একটি সীমাবদ্ধ জীবন নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে আসে। তাকে এ সীমিত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জগৎ ও সংসারের সমুদয় কাজকর্ম শেষ করে হতে হবে স্মরণীয় ও বরণীয়। তাই মানব জীবনকে সফল ও। সার্থক করে তুলতে সময়ের সদ্ব্যবহার করা একান্ত প্রয়ােজন। সময়ের যথাযথ মূল্য না দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের আদৌ কোনাে বিকল্প পথ নেই।
সময়ের মূল্য : সময় নিরন্তর প্রবহমান বলেই মানবজীবনে সময় অমূল্য সম্পদ। এর মূল্য কোনাে জিনিস দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। মানুষের ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, স্বাস্থ্য ইত্যাদি হারিয়ে গেলে স্বীয় চেষ্টায় হয়তাে তা ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু সময় একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। একজন বিত্তশালী লােক তার অর্থবিত্ত দিয়ে হয়তাে পৃথিবীর সবকিছু ক্রয় করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সময়কে ক্রয় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ সময় সকল ক্রয় ক্ষমতার উর্ধ্বে। সময় নদীর স্রোতের মতােই বহমান। কারাের অনুরােধে এক মুহূর্তের জন্য থামবার অবকাশ তার নেই। সময়ের মূল্য বুঝাতে গিয়ে রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন- “একটা দিন চলে যাওয়ার মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া।” আবার ইংরেজ কবি Milton তার সনেটে উল্লেখ করেছেন- “Time is the subtle thief.” তাই সময়ের মূল্য লিখে বা বলে শেষ করার সুযােগ নেই। জীবনে সময়কে কাজে লাগাতে পারলে সাফল্য অনিবার্য হয়ে উঠে। তাই মানবজীবনে সময়ের মূল্য অপরিসীম।
মানবজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার : মানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে যাওয়াই মানব জীবনের সার্থকতা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। সময়কে ঠিকমতাে কাজে লাগাতে না পারলে জীবনে উন্নতি করা যায় না। একজন কৃষক যদি নির্দিষ্ট ঋতুতে ফসলের বীজ বপন না করে, তাহলে ফসলের ঋতু শেষ হয়ে যাবার পর কেঁদে বুক ভাসালেও কোনাে লাভ হবে না। কারণ সময় চলে গেছে, চলে গেছে ঋতু। তাই কর্তব্য কর্ম কখনাে ফেলে রাখতে নেই। আজ করব না কাল করব ভাবলে দিনই কেবল চলে যায়। তাছাড়া মানুষের মনের পরিবর্তন হয় অতি সহজে। একবার একটি কাজে আগ্রহ থাকলে পরে সে আগ্রহ। নাও থাকতে পারে। শরীরে শক্তি সামর্থ্য মানুষের চিরদিন থাকে না। তাই যতদিন তা থাকে ততদিন মানুষের উচিত এর সঠিক প্রয়ােগের মাধ্যমে সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত
করা।
ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার : ছাত্রজীবনে সময়ের সঠিক ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ছাত্রজীবনকে বলা হয় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে, জীবনে সে তেমন ফল পাবে। তাই কবি বলেছেন-
“যে চাষা আলস্য তবে
বীজ না বপন করে
পক্ক শস্য পাবে সে কোথায়!”
কবির এ চরণগুলাে সময় অপচয়কারী ছাত্রের জন্য। চিরন্তন সত্য। ছাত্রজীবনশিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা, চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময় কিন্তু এসময় যদি ছাত্র আলস্যে সময় অতিবাহিত করে, তাহলে তার জীবনে কোনাে সফলতা আসবে না। ছাত্রজীবনে। প্রত্যেকের উচিত সময়ের মূল্য দিয়ে নিয়মিত লেখাপড়া করা, ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য। প্রস্তুতি নেওয়া। তবেই সে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
সময় অপব্যবহারের কুফল : যারা সময়ের মূল্য বুঝে না বা সময়কে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে পারে না তাদের জীবনে নেমে আসে দুঃখের কালো ছায়া। ওয়াটার-লুর যুদ্ধে নেপােলিয়নের জনৈক সেনাপতি পূর্ব নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট। পর। সসৈন্যে হাজির হওয়ায় নেপােলিয়নকে শশাচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। আবার অনেক প্রতিভাবান ও মেধাবী ছাত্রকে শুধু সময়ের প্রতি উদাসীনতার জন্য পরীক্ষায় ফেল করতে দেখা গেছে। তাই সময়ের কাজ সময়ে না করে অবহেলায় সময় নষ্ট করার অর্থ নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনা। আর সর্বনাশ যখন হয়েই যায়, তখন আর কিছুই করার থাকে না। কবি লালনের ভাষায়-
“সময় গেলে সাধন হবে না।”
সময়কে কাজে লাগানাের উপায় : মানবজীবনে অনেক কর্তব্য ও দায়িত্ব থাকে। জীবনের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এসব দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হলে উপযুক্ত সময় নির্বাচন করে নিতে হবে। কাজের পরিমাণ বিবেচনা করে সময়কে ভাগ করে নিলে ঠিক সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব। কাজের সময়ের মতাে অবসর সময়ও চিহ্নিত করে রাখতে হবে। সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারলেই সময়কে কাজে লাগানাে তথা
সময়ের সদ্ব্যবহার সম্ভব। মনে রাখতে হবে সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করেই মানুষ
ইতিহাসে কীর্তিমান হয়ে আছে।
সময়ানুবর্তিতার দৃষ্টান্ত : যেসব মহাপুরুষ পৃথিবীর বুকে যুগে যুগে অমর কীর্তি রেখে গেছেন, তারা সবাই সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাঁদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল ব্যস্ত ও কর্মবহুল। ফলে তারা পেয়েছেন সফলতা; হয়েছেন বিশ্বখ্যাত। বিশ্বনবি হযরত মুহম্মদ (স.), হযরত উমর ফারুক (রা.), হযরত আবু বকর (রা.), হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) প্রত্যেকে সময়ের মূল্য দিয়েছেন। আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন সময়ের মূল্য দিয়ে সাধারণ শ্রমিক থেকে দেশের প্রধান হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এ. কে. ফজলুল হক, আইনস্টাইন, নিউটন, আলভা এডিসন প্রত্যেকেই সময়ের সদ্ব্যবহার করতেন। অন্যদিকে সময়নিষ্ঠ জাতি হিসেবে জাপানি, আমেরিকান, ইংরেজ, চাইনিজ, কোরিয়ানদের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। এসব জাতি সময়ের সদ্ব্যবহার করে বিশ্বে তাদের দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে।
উপসংহার : ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে সময়ের মূল্য অত্যধিক। কেবল সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানাের মাধ্যমেই
জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করা যায়। তাই আমাদের উচিত সময়ের সার্থক ব্যবহারের
মাধ্যমে জীবনের সাফল্য নিশ্চিত করা।