অধ্যবসায় রচনা (২০পয়েন্ট+Pdf)
রচনার নামঃ অধ্যবসায়
সূচনা : পৃথিবীতে সফলতার জন্য চাই সাধনা; সাধনার জন্য চাই একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা। এ পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন, খ্যাতনামা হয়েছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসায়ের দ্বারাই হয়েছেন অধ্যবসায়ী হতে না পারলে জীবনে পরম আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটি মরীচিকার মতােই থেকে যায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করার গুণটিই অধ্যবসায়। তাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন –
“কোনাে কাজ ধরে যদি উত্তম সে জন।
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।”
অধ্যবসায় : অধ্যবসায় হলাে কোনাে কাজে অবিরাম সাধনা বা ক্রমাগত প্রচেষ্টা। বার বার কোনাে কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে নিজেকে সাফল্যের দ্বারে পৌছে দেয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা, তারই নাম অধ্যবসায়। অর্থাৎ পরম ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রমের নামই অধ্যবসায়।
অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা : মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। যা মানুষের যাপিত জীবনের প্রতিনিয়ত যে সংগ্রাম, তার মূল প্রেরণা। মানবজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। কারণ অধ্যবসায় ছাড়া এ জগতে কেউ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীতে যা কিছু মহৎ, যা কিছু সুন্দর, যা কিছু কল্যাণকর সবই অধ্যবসায়ের দ্বারা অর্জিত হয়েছে। তাই অধ্যবসায় মানব সভ্যতার অগ্রগতির চাবিকাঠি, ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতির সােপান। মানবজীবনে চলার পথে নানা
বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। এ সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে পায়ে ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে
যেতে হবে। তবেই জীবনে উন্নতি আসবে। তাই কবি কালিপ্রসন্ন ঘােষ বলেছেন,
“পারিব না একথাটি বলিও না আর
কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার।
বব। পাঁচজনে পারে যাহা,
তুমিও পারিবে তাহা
পার কি না পার কর যতন আবার
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
মনে রাখতে হবে রাতের ঘাের অন্ধকার কেটে গিয়ে যেমন দেখা দেয় সােনালি উষা, তেমনি বারবার চেষ্টার ফলে মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা। অধ্যবসায়ের দ্বারাই মানুষ এ জগতে অসাধ্য সাধন করেছে। বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, স্থপতি, সেনানায়ক, ধর্মপ্রচারক সবাই অধ্যবসায়ের ফলে সার্থকতা লাভ করেছেন। তাই কবি বলেন। ধৈর্য ধরাে, ধৈর্য ধরাে! বাঁধাে বাঁধাে বুক, শত দিকে শত দুঃখ আসুক আসুক।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন রচনার অনুশীলন ক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ। বিশ্বের কোটি কোটি ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষ চেয়ে আছে তাদের দিকে। আলস্যপরায়ণ এবং শ্রমবিমুখ হাত্র-ছাত্রী কখনাে বিদ্যার্জন করতে পারে না। অধ্যবসায়ী ছাত্র-ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও সফলতা লাভ করতে পারে। কোনাে ছাত্র একবার বিফল হয়ে বসে থাকলে চলবে না, পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে তার অধ্যবসায়ে মনােনিবেশ করা প্রয়ােজন।
ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অধ্যবসায়ী হওয়া দরকার। কারণ তাদের সাফল্যের উপরই
জাতির সাফল্য নির্ভর করে। তাই ছাত্রদের
শ্লোগান হওয়া প্রয়ােজন
“আসবে পথে আঁধার নেমে
তাই বলে কি রইব থেমে?”
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় : জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের কোনাে বিকল্প নেই। ছাত্রজীবনে ও
ব্যক্তিগত জীবনে যেমন অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে একইভাবে জাতীয় জীবনেও অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। অধ্যবসায়ী না হলে কোনাে জাতি উন্নতি ও অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। একমাত্র অধ্যবসায়ী জাতিই উন্নতির স্বর্ণ শিখরে
আরােহণ করতে পারে এবং সার্বিক সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত
হতে পারে। আর এতে করে জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব কতখানি তা সহজেই
অনুমেয়।
আরও দেখুন:- রচনা: মানব কল্যাণে বিজ্ঞান/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান(২০পয়েন্ট)।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা : অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। অধ্যবসায়ের সাথে প্রতিভা যােগ হলেই মানুষ বড় কিছু হতে পারে। অধ্যবসায় না থাকলে শুধু প্রতিভার দ্বারা কিছু হয় না। আবার অধ্যবসায় থাকলে অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী না হলেও বড় কার্য সাধন করা যায়। জগতে বহু বিখ্যাত লােক আছেন যাঁরা প্রতিভাবান অপেক্ষা অধ্যবসায়ী ছিলেন বেশি। বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেন, “প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম এবং সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে। ” ডালটন স্পষ্ট ভাষায়বলেছেন,
“লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।”
অধ্যবসায় ও সফলতা: জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া কোনাে সুবিবেচকের কাজ নয়। বলা হয়ে থাকে “Failure is the pillar of success”, অর্থাৎ ব্যর্থতাই সফলতার সােপান। যে লােক বিফলতার তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে
অধ্যবসায়ের সাথে কাজে অগ্রসর হয়, সফলতা তার জন্য নিশ্চিত। অবিচলিত অধ্যবসায়ের দ্বারা সফলতার চরম লক্ষ্যে পৌঁছানাে অসম্ভব কিছু নয়। তাই বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সােনালি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
অধ্যবসায়হীনের অবস্থা : অধ্যবসায়ের অভাবে অনেক সম্ভাবনা অকালে শেষ হয়ে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনাে কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। তার জীবন ধ্বংস হয়, ব্যর্থ হয়। তার স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। সমাজের আঁস্তাকুড়ে নির্ধারিত হয় তার ঠিকানা।
অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ : জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র অধ্যবসায়। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নিরাশ মনে জঙ্গলে ঘুরছিলেন। একটি মাকড়সাকে সাতবার চেষ্টা করে দুটি কড়িকাঠে সুতা জড়াতে দেখে তিনি অদম্য উৎসাহে শত্রুরাজ্য সপ্তম বারের মতাে আক্রমণ করে স্বদেশ উদ্ধার করেন। অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর নেপােলিয়ন তাঁর জীবনের কার্যকলাপের জন্য রেখে গিয়েছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোনাে কাজকে তিনি অসম্ভব বলে ্মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির
ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। রবার্ট পিল অধ্যবসায়ের মাধ্যমে একজন বিখ্যাত অর্থবিদ
হতে পেরেছিলেন। অধ্যবসায়ের দ্বারা কলম্বাস আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, জগদীশচন্দ্র বসু ও নজরুল ইসলাম বিশ্ববিখ্যাত হতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানী নিউটন নিজেই স্বীকার
করেছেন, বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম।
উপসংহার:
জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌছানাের নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে শত প্রতিকূলতাও নিরস্ত করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাই সবাইকে হতে হবে কঠোর
অধ্যবসায়ী। যখনই কোনাে ব্যর্থতা, কোনাে দুঃখ, কোন বিপদ আমাদের জীবনকে বিষময় করে তােলে, তখনই অধ্যবসায়ী মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করে তাদের আদর্শ অনুসরণ করা উচিত। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন, যারা অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী।