বায়োমেট্রিক্স কি ( সকল তথ্য জানুন)
হ্যালো বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভালো আছেন। এখন আমরা বায়োমেট্রিক্স কি এবং এর সকল যাবতীয় তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির সাথে সাথে সব কিছুই পাল্টে যাচ্ছে। এখনকার সময়ে বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি ঘটছে। ধরা যাক, একটি বড় প্রতিষ্ঠানের গেটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর লাগানাে আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কারা কারা ঢুকতে পারবে আগে।থেকেই তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে কম্পিউটারে বিশেষ নিরাপত্তা সফটওয়্যারের ডেটাবেজে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। গেটে আগত প্রবেশকারী তার আঙুল দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের বিশেষ স্থানে চাপ দিবে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি হয়ে তা কম্পিউটারে যাবে এবং কম্পিউটারে রক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে মিলিয়ে দেখবে। যদি মিল পায় তাহলে ওকে সিগনাল আসবে এবং কম্পিউটারের সাথে ইন্টারফেস করা গেটটি খুলে যাবে। আর যদি না মিলে তাহলে গেট বন্ধ থাকবে। এখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট হলাে একটি বায়ােলজিক্যাল ডেটা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ হলাে ইউনিক আইডেনটিটি। একজনের্আঙুলের ছাপের সাথে আরেকজনের আঙুলের ছাপ মিলবে না। এখানে আঙুলের ছাপকে ব্যবহার করে কম্পিউটার সফটওয়্যার নির্ভর যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে তা-ই হলাে বায়ােমট্রিক্স পদ্ধতি।
গ্রীক শব্দ “bio” (life) ও “metric” (to measure) থেকে উৎপত্তি হয়েছে বায়ােমেট্রিক্স (Biometrics) । বায়ােমেট্রিক্স হলাে বায়ােলজিক্যাল ডেটা মাপা এবং বিশ্লেষণ করার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি। তথ্য প্রযুক্তিতে বায়ােমেট্রিক্স সেই প্রযুক্তি যা মানুষের
“দেহের বৈশিষ্ট্য (যেমন: ডিএনএ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের রেটিনা এবং আইরিস, কণ্ঠস্বর, চেহারা এবং হাতের মাপ ইত্যাদি) মেপে এবং বিশ্লেষণ করে বৈধতা নির্ণয় করে। কম্পিউটার পদ্ধতিতে নিখুঁত নিরাপত্তার জন্য বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে মানুষের বায়ােলজিক্যাল ডেটা কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষিত করে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে এসব ডেটা নিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিলিয়ে দেখা হয়। ডেটা মিল পেলে বৈধ বলে বিবেচিত হয় এবং অনুমতি প্রাপ্ত হয়।
Table of Contents
বায়ােমট্রিক্স এর প্রকারভেদ (Classification of Biometrics)ঃ
দেহের গঠন ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা-
দেহের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের বায়ােমট্রিক্স পদ্ধতি
১. মুখ (Face) : মুখ বা চেহারার বৈশিষ্ট্য (facial characteristics) বিশ্লেষণ করা ।
২. ফিঙ্গারপ্রিন্ট (Fingerprint) : প্রত্যেকের আলাদা একক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাতের ছাপ বিশ্লেষণ করা।
৩. হ্যান্ড জিওমেটরি (Hand Geometry) : হাতের গঠন (shape) এবং আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের মাপ বিশ্লেষণ করা।
৫. আইরিস (Iris) : চোখের মণির চারিপার্শ্বে বেষ্টিত রঙিন বলয় (colored ring) বিশ্লেষণ করা ।
৬. রেটিনা (Retina ): চোখের পিছনের অক্ষিপটের (রেটিনার) মাপ বিশ্লেষণ করা।
৭. শিরা (Vein) : হাত এবং কজির শিরার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করা।
আচরণগত বৈশিষ্ট্যের বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতি
১. কণ্ঠস্বর (Voice) : প্রত্যেকের কণ্ঠের ধ্বনির বৈশিষ্ট্য, সুরের উচ্চতা, সুরের মূর্ঘনা, স্পন্দনের দ্রুততা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা।
২. সিগনেচার (Signature) : হাতের দস্তখত বিশ্লেষণ করা।
৩. টাইপিং কী স্ট্রোক (Typing Keystroke) : নির্দিষ্ট কোন পাসওয়ার্ড যা টাইপ করে এন্ট্রি করা হয় এবং বিশ্লেষণ করা।
আরও জানুন :- স্মার্টফোন এর কোন ডিসপ্লে সবচেয় ভালো, ডিসপ্লে কত প্রকার
বায়োেমট্রিক্স এর ব্যবহার (Application of Biometrics)ঃ
বর্তমানে নিরাপত্তার কাজে বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ প্রযুক্তি সাধারণত দুই ধরনের কাজে ব্যবহৃত
হয়। যথা-
১. কোন ব্যক্তি সনাক্তকরণ (Identification) কাজ
২. সত্যতা যাচাই (Verification) কাজ
আরও দেখুন:- আলেশা কার্ড কি: কিভাবে পাবেন,সুবিধাসমূহ।
ব্যক্তি সনাক্তকরণ (Identification) কাজ :
ব্যক্তি সনাক্তকরণ কাজে প্রচলিত
সনাতনী পদ্ধতিতে ভােটার আইডি, পাসপাের্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি
টোকেন নির্ভর এবং ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড বা পিন নাম্বার ইত্যাদি জ্ঞানভিত্তিক
পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে জালিয়াতির সুযােগ থাকে। তাই বর্তমানে মানুষের
নিজস্ব একক কোন বৈশিষ্ট্যের আলােকে অর্থাৎ বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতিতে সনাক্তকরণের
কাজ করা হয়। এটি অনেক বেশি নিরাপদ ও গ্রহণযােগ্য।
সত্যতা যাচাই (Verification) কাজ :
এ পদ্ধতিতে কম্পিউটারে রক্ষিত বায়ােলজিক্যাল ডেটার তুলনা করে ভেরিফিকেশন করা হয়।
নিম্নে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতি সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার (Fingerprint Reader):
বর্তমানে আঙুলের ছাপ (Fingerprint) নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি জনপ্রিয় বায়ােমেট্রিক সিস্টেম। এ পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট অপটিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আঙুলের ছাপের ইমেজ নেয়া হয়। ইনপুটকৃত ইমেজের অর্থাৎ আঙুলের ছাপের বিশেষ কিছু। একক বৈশিষ্ট্যকে ফিল্টার করা হয় এবং এনক্রিপ্টেড বায়ােমেট্রিক কী হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্টের ইমেজকে সংরক্ষণ না করে সংখ্যার সিরিজ (বাইনারি কোড) কে ভেরিফিকেশনের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেমের এ্যালগরিদম এই বাইনারি কোডকে ইমেজে পুনঃরূপান্তর করতে পারে না। তাই কেউ ফিঙ্গার প্রিন্টকে নকল (ডুপ্লিকেট)করতে পারে না। বায়ােমেট্রিক্স ডিভাইস, যেমন ফিঙ্গার স্ক্যানারে থাকে একটি রিডার অথবা স্ক্যানিং ডিভাইস এবং সফটওয়্যার স্ক্যান করা তথ্যকে ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তর করে এবং ম্যাচিং পয়েন্টগুলাে তুলনা করে।
ফেইস রিকগনিশন (Face recognition):
মানুষের চেহারায় ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একজনের চেহারার সাথে আরেকজনের চেহারা মিলে না। ফেইস রিকগনিশন পদ্ধতিতে মুখ বা চেহারার বৈশিষ্ট্য (facial characteristics) বিশ্লেষণ করে সনাক্তকরণ করা হয়। দুই চোখের মধ্যকারদূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য বা ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক মাপ ইত্যাদি পরিমাপের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে সনাক্ত করা যায় ।
হ্যান্ড জিওমেট্রি (Hand Geometry):
মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠনে ভিন্নতা রয়েছে। হ্যান্ড জিওমেট্রি রিডারের সাহায্যে হাতের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ডেটা কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে আবার হ্যান্ড জিওমেট্রি রিডারের সাহায্যে হাতের বিভিন্নবৈশিষ্ট্যের ডেটা ইনপুট নিয়ে আগের ডেটার সাথে মিলিয়ে সনাক্তকরণ করা হয় ।
আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান (Iris and Retina Scan):
আইরিস সনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চোখের তারার রঙিন অংশকে পরীক্ষা করা হয় এবং রেটিনা স্ক্যান পদ্ধতিতে চোখের মণিতে। ক্তের লেয়ারের পরিমাণ পরিমাপ করে মানুষকে সনাক্ত করা হয়।
ভয়েস রিকগনিশন (Voice Recognition):
এ পদ্ধতিতে কণ্ঠস্বরকে ডেটায় রূপান্তর করে কম্পিউটারের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ভয়েস ইনপুট নিয়ে
আগের সংরক্ষিত ভয়েসের সাথে মিলিয়ে দেখে সনাক্তকরণ করা হয় ।
সিগনেচার ভেরিফিকেশন (Signature Verification):
এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর হাতের স্বাক্ষরকে পরীক্ষা করে সত্যতা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের কলম এবং প্যাড ব্যবহার করে স্বাক্ষরের আকার, লেখার গতি, সময় এবং কলমের চাপকে পরীক্ষা করা হয়। অন্যান্য বায়ােমেট্রিক্স পদ্ধতির চেয়ে খরচ কম। ব্যাংক-বীমা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্বাক্ষর সনাক্তকরণের কাজে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
One Comment