রচনা: মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
রচনার নামঃ মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার।
মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
ভূমিকাঃ
বর্তমান সভ্যজগতে কোটি কোটি মানুষের জীবন ধ্বংসকারী মাদক দ্রব্য সমাজের শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে পড়েছে। এবিষাক্ত কালনাগিনীর বিষাক্ত দংশনে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে শত শত তরতাজা তরুণের দেহ। এ বিভৎস মৃত্যুর দৃশ্যেবিশ্ব বিবেক ভয়ে আঁতকে উঠছে। তবুও এই ক্ষতিকর নেশায় হাজার হাজার তরুণ আসক্ত। তারা আজ বিপন্ন ও বিপর্যস্ত।বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশেও দাবানলের মতাে ছড়িয়ে পড়েছে এ মরণ ঘাতি নেশা।
মাদকাসক্তি :
কোনাে কিছুর প্রতি তীব্র আকর্ষণকে আসক্তি বলে । এ আকর্ষণ অভ্যাসজনিত । একবার এতে অভ্যস্ত হলে তা থেকেআর মুক্তি পাওয়া যায় না এবং মুক্তি পাওয়া বড়ই কঠিন।
মাদক দ্রব্যের প্রকারভেদঃ
যেসব দ্রব্য গ্রহণ করলে শরীর মনকে নেশা ধরায় এবং নেশাগ্রস্ত করে তােলে সেগুলােকেই আসক্তির উপকরণ বা মাদক দ্রব্য বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকারের উপকরণ রয়েছে মাদকাসক্তির জন্য। যেমন— আগেকার দিনের মদ, গাজা, আফিম, চরস, ভাং ইত্যাদি। এ দ্রব্যগুলােই উল্লেখযােগ্য মাদক দ্রব্য বলেই পরিচিত। এগুলাের সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে।
মরফিন, হিরােইন, মারিজুয়ানা ইত্যাদি। এছাড়াও ঘুমের বড়ি, ইনজেকশন আজকাল নেশা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, এগুলোর সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে হিরােইন। হিরােইন এখন সােনার চেয়েও অতি মূল্যবান আকর্ষণীয় বস্তু হিসেবে তরুণ যুবকদেরকাছে। আমাদের দেশে এ সর্বনাশা নেশা দ্রব্যটি অসংখ্য সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীর জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
মাদকের উৎসঃ
মাদক দ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দ্রব্যটি হচ্ছে আফিম। এ আফিম থেকে উৎপন্ন হয় সর্বনাশা হিরােইন আর অফিম তৈরি হয় পপি নামক এক শ্রেণির গাছ থেকে। এশিয়ার তিনটি এলাকায়। যেমন- থাইল্যান্ড, লাওস, বার্মায় পপির চাষ করা
হয়ে থাকে। এ ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্কতে পপির চাষ করা হয়ে থাকে। ভারত, নেপালের প্রান্ত জুড়ে পপির চাষ প্রচলিত আছে। মারিজুয়ানা উৎপাদন হয় আফ্রিকায়। এ ছাড়াও আমেরিকা এবং এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অঞ্চলে মারিজুয়ানা মাদক উপকরণটির উৎপাদন হয়ে থাকে।
মাদকাসক্তির কারণঃ
মাদকাসক্তির, উৎসভূমি মানুষের মনমানসিকতা। শারীরিক কারণে ও মন-মানসিকতার উপর নির্ভর করে মাদকাসক্তি জন্ম নেয় । হতাশা, ব্যর্থতা, বিবাদ, বেকারত্ব-সমস্যা, দরিদ্র জ্বালা থেকেই মাদকাসক্তি জন্ম নেয় তরুণ সমাজে।
বন্ধুবান্ধবের প্ররােচনায় নতুনের প্রতি আকর্ষণ, অসৎসঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে মাদকাসক্ত হয়ে থাকে। তাছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক
অবস্থায় অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে থাকে। নিজ আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পেরে ব্যক্তি তার হতাশায় ভােগে এবং নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। জীবনের প্রতি চরম বিতৃষ্ণাকে ভুলে থাকার ইচ্ছায় ব্যক্তি ঐ মরণ পথকে বেছে নেয়।
মাদকাসক্তির কুফলঃ
মাদকাসক্তি একটি মারাত্মক ব্যাধি। মাদক দ্রব্যের ক্ষমতা প্রবল যে এটি খুব শীঘ্রই অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। একবার কেউ এতে অভ্যস্ত হলে সহজে তা ত্যাগ করতে পারে না। এমন কি পাবার জন্য প্রবলভাবেই আকৃষ্ট হয়।মাদকাসক্তি
মানুষের ইচ্ছা শক্তিকে একেবারে দুর্বল করে ফেলে। মনকে নষ্ট করে ফেলে। বিবেকবুদ্ধিকেও একেবারে লােপ করে ফেলে।কর্মক্ষমতা ও স্বদিচ্ছা ধ্বংস করে দেয়। আপনদের প্রতি জাগে বিতৃষ্ণা । উগ্র মাদক দ্রব্য বিশেষ করে হিরােইন গ্রহণের সাথে সাথে মানুষের মনে একটা সুখকর অনুভূতি জাগে এবং এর পর পরই সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ অবস্থা প্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে থাকে। তারপর শুরু হয় অস্থিরতা। তখন আরও হিরােইন গ্রহণের ইচ্ছে জাগে। এর তীব্রতা এত বেড়ে যায় যে, সে যন্ত্রণা উপশমের জন্য
হিরােইন না পেলে সে তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ।
মাদকাসক্তির প্রতিকারঃ
মাদকাসক্তির কবল থেকে রক্ষা পাবার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন
(ক) চিকিৎসার মাধ্যমে।
(খ) প্রতিরােধ ব্যবস্থার মাধ্যমে।
(গ) আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
(ঘ) মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ।
(ঙ) প্রচারের মাধ্যমে।
(চ) নৈতিক অবক্ষয় রােধের মাধ্যমে।
(ছ) পারিবারিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে।
চিকিৎসার মাধ্যমেঃ
প্রাথমিক পর্যায়ে মাদকাসক্তি ব্যক্তিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন করতে পারলে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাবার
ব্যবস্থা হতে পারে এবং তা অনেক ভালাে ফল হয়।
প্রতিরােধ ব্যবস্থার মাধ্যমে :
আসক্তির জন্ম ও কারণ সম্পর্কে আসক্তকারীকে সচেতন করে তুলতে পারলে মাদকাসক্ত থেকে মুক্তি এবং মাদকাসক্ত বন্ধ হতে পারে। এ ব্যবস্থাটি অতি সহজ নয়। এ জন্য অনেক ত্যাগের প্রয়ােজন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেঃ
সরকারিভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে মাদক সম্পর্কীয় সকল প্রকার দ্রব্যাদি বাজারে ক্রয় বিক্রয় এবং দেশ ও বিদেশ থেকে আনা-নেয়ার জন্য আইনের কড়া ব্যবস্থা থাকলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমে যাবে এবং মাদক
অভ্যস্থ হবার পথ থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। মাদকাসক্তি বন্ধ হবে।
প্রচার মাধ্যমেঃ
দেশের সকল প্রকার প্রচার মাধ্যমগুলাের মাধ্যমে মাদক দ্রব্যের সুফল ও কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে দেশের তরুণ সমাজ তথা বিরাট জনগােষ্ঠীকে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত করা যেতে পারে।
নৈতিক অবক্ষয় রােধঃ
নৈতিক অবক্ষয়ের কবল থেকে মুক্ত হতে পারলে মাদকাসক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
পারিবারিক পদক্ষেপের মাধ্যমেঃ
পারিবারিক দিক থেকে পরিবার প্রধান সতর্ক দৃষ্টি রাখলে ছেলেমেয়েরা কুসঙ্গ থেকে দূরে থাকবে এবং মাদকাসক্তির মতাে ভয়াবহ আসক্তির কাছ থেকে দূরে রাখা যাবে। ফলে মাদকাসক্তি থেকেও মুক্ত হতে পারা যাবে।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্ব আজ মারাত্মক ভয়াবহ মাদকাসক্তি আতঙ্কে আতঙ্কিত। তাই প্রচলিত মূল্যবান ও জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিসাধনে এর প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ মাদক দ্রব্যের ব্যবহার অবৈধ ও অন্যায়। মাদক দ্রব্য যাতে দেশে উৎপাদন ও বিদেশ থেকে কোনােক্রমেই আসতে না পারে সেদিক থেকে আমাদের কড়া সতর্কতারেখেই সরকারকে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে । আর মাদক দ্রব্য যাতে কেউ সেবন করতে না পারে সে দায়িত্ব সমাজের । তাই
জীবনঘাতি মাদক দ্রব্যের কবল থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। জাতিকেও বাঁচাতে হবে। তা না হলে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে ।
ধ্বংস হবে বিশ্ব সভ্যতা।