জীবনী

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী রচনা

এখন আমরা জানব বিশ্ব নবী হযরত মুৃহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে।
নামঃ হযরত মুহাম্মদ (সঃ)

জন্মঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ১২ ই রবিউল আউয়াল।

বাবার নামঃ আব্দুল্লাহ

মাতার নামঃ আমেনা

প্রথম স্ত্রীঃ বিবি খাদিজা

সন্তানঃ পুএ:কাসিম,আবদুল্লাহ, ইবরাহিম কন্যা: জয়নব ,রুকাইয়াহ ,ফাতেমা, উম্মে কুলসুম

আত্বীয়ঃ নাতি:হাসান,হুসাইন নাতনি:

মৃত্যুঃ ৮ই জুন ৬৩২ বয়স(৬২) ১২ই রবিউল আউয়াল

  • সমাধিঃ মদিনা সৌদি আরব

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) (৫৭০-৬৩২ খ্রিঃ)। যে মহামানবের সৃষ্টি না হলে মহাবিশ্বের কিছুই সৃষ্টি হতো না,যার পদধুলিতে ধন্য হয়েছিল পৃথিবী।মহান মনিবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা,আমানতদারিতা, সুরুচিসম্পন্ন,অন্তরের পবিত্রতা,আত্নার মহত্ব,ধৈয্যর্ অপরিসীম সীমা,সততা,মিতচার,বাদান্যতা,ন্যায়পরায়নতা,উদারতা ও কঠোর নিষ্ঠা ছিল যার চরিত্রের ভুষন।

• যিনি ছিলেন একাধারে ইয়াতিম হিসেবে সবার স্নেহের পাত্র, স্বামী হিসেবে প্রেমময়, পিতা হিসেবে সবার স্নেহের আধার,সফল ব্যবসায়ী,সমাজ সংস্কারক, ন্যায় বিচারক,সঙ্গি হিসেবে বিস্বস্ত,মহৎ রাজনীতিবিদ এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক;তিনি হলেন সবযুগের সেরা মানব হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)।এই মানুষটি এমন এক সময় পৃথিবীতে এসেছিলেন যখন আরবরা রাজনৈতিক,অথনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক অবস্থা অধঃপতনের চরম অবস্থায় নিমজ্জিতপ্রায়।

আরও দেখুন:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

• ৫৭০খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল প্রত্যুষে আরবের মক্কা নগরিতে সম্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।মাতা আমেনা আর পিতা আব্দুল্লাহ তার জন্মের সেই ৫মাস আগেই রবের ডাকে সাডা দিয়ে পরপারে চলে গেছেন।আরবের তৎকালিন প্রথা অনুযায়ী তার লালন পালন ও তাকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পায় বনু সাদ গোত্রের বিবি হালিমা।এ সময় বিবিহালিমার আরেক পুত্র সন্তান ছিল,যার দুধ পানের বয়স তখনো পার হয়নি।মা হালিমার সম্ভাষন অনুযায়ী “শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)কেবলমাত্র আমার ডান স্তনের দুধ পান করত।আমি তাকে বাম স্তনের দুধ পান করাইতে চাইলেও,তিনি কখনো বাম স্তনের দুধ পান করতেন না। আমার বাম স্তনের দুধ তিনি তার অপর ভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন।দুধ পানের এ নিয়ম তার দুধ পানের শেষ দিবেসও বিদ্যামান ছিল।”ইনসাফ ও সাম্যের মহান আদশ’ তিনি শিশুকালেই দেখিয়েছেন।
• মাত্র ৫ বছর তিনি ধাত্রী মা হালিমার কাছে ছিলেন।এরপর ফিরে আসেন মা আমেনার কছে।৬বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনাকে হারান।মা হারা বাবা হারা শিশু মুহাম্মাদ (সাঃ)হয়ে যান ইয়াতিম।এরপর দাদা আব্দুল মোত্তালিবের কাছে বেড়ে উঠতে লাগলেন।কিছু সময় পর দাদা ও দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে চাচা আবু তালেবের কাছে বড় হন।

আরও দেখুন:- আলবার্ট আইন্সটাইনের জীবনী

• পৃথিবীর শ্রেষ্ঠমানব যিনি সারা জাহানের উপর রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন।যিনি আজন্ম ইয়াতিম এবং দুঃখ বেদনার মধ্যদিয়ে গড়ে উঠেন সত্যবাদি,পরোপকারী এবং আমানতদার হিসেবে।তার চরিত্র,আমানতদারী ও সত্যবাদিতার জন্য আরবের কাফেররা তাকে ‘আলামিন ‘উপাধিতে ভূষিতকরেন।তৎকালিন আরবের অরাজকতা, বিশৃংখলা,হত্যা যুদ্ধ বিগ্রহ ছিল নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।’হরবে ফুজ্জার’যুদ্ধএর তান্ডবলীলা দেখে বালক মু্হাম্মদ (সাঃ)খুব ব্যাথিত হন।মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি হিলফুল ফুযুল নামক একটি শান্তি সংগ প্রতিষ্ঠা করেন।মানুষের সাহায্য এবং বিভিন্ন গোত্রের মাঝে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে আনার দীপ্ত শপথ নিয়ে সংগটি এগিয়ে যায়।বালক মুহাম্মদ (সাঃ)ভবিষ্যতে শান্তির অগ্রদূত হবেন এখানেই তার প্রমান মেলে।যুবক মুহাম্মদ (সাঃ) এর সততা,বিশ্বস্ততা,চিন্তা চেতনা,কম’ দক্ষতা ও ন্যায়পরায়নতায় মুগ্ধ হয়ে তৎকালিন আরবের ধনাঢ্য ও বিধবা মহিলা খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ বিয়ের প্রস্তাব দেন।এ সময় খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর বয়স ছিল ২৫ বছর।তিনি চাচা আবু তালিবের সম্মতিক্রমে বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন।বিবাহের পর খাদিজা তার ধন সম্পদ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর হাতে অপ’ন করেন।
• কিন্তু আরবের তৎকালিন কাফের,মুশরিক,ইহুদী, নাসারা ও অন্যান্য ধমে’র অনুসারীরা জুলুম,অবিচার,মিথ্যা ও পাপাচার দেখে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্তর দঃখ বেদনায় ভরে যেত।এবং দুনিয়ায় কিভাবে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় সে চিন্তায় তিনি প্রায়শই মক্কার অনতিদূরের ‘হেরা’ গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন।বিবি খাদিজা স্বামীর প্রতিভা আর ব্যাক্তিত্ব উপলব্ধি করতে পেরে ধ্যানমগ্ন থাকার পূন’ সুযোগ দিয়েছিলেন।ক্রমান্বয়ে তার বয়স যখন ৪০ পূন’ হয় তখন তিনি নবুওয়ত প্রাপ্ত হন এবং তার উপর নাজিল হয় সব’প্রথম কোরানের সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত।এরপর সুদীঘ’ ২৩ বছরে ৩০ পারা কোরাঅান নাজিল হয়।নবুয়ত প্রাপ্তির প্রথম ৩ বছরে তিনি নিজ পরিবার ও নিকট আত্নীয়ের কাছে দাওয়াত প্রচার করেন।সব’প্রথম দাওয়াত কবুল করেন বিবি খাদিজা(রাঃ)।এরপর যখন তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন এবং ঘোষনা করেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”তখন মক্কার কুরাইশ কাফেররা তার বিরোধিতা করতে শুরু করে।এতদিনে বিশ্বনবী ছিলেন সবার নিকট আল আমিন হিসেবে পরিচিত; কিন্তু এ ঘোষনা দেয়ার পর তিনি কুরাইশ কাফেরদের কাছে একজন পাগল ও জাদুকর।যেহেতু কোরঅান আরবী ভাষায় নাজিল হয়েছে এবং আরবদের ভাষাও আরবি,তাই তারা রাসুলুল্লার প্রচারিত বানীর মমা’থ’ অনুধাবন করতে পেরেছিল।তারা বুজতে পেরেছিল যে মুহাম্মদ(সাঃ) যা প্রচার করছেন তা কোনো সাধারন কথা নয়। যদি এটা মেনে নেয়া হয় তাহলে তাদের ক্ষমতার মসনদ টিকে থাকবেনা।তাই তারা হজরত মুহাম্মাদ(সাঃ)কে বিভিন্ন ভয়,ভিতী ;এমনকি ধন দৌলত ও আরবের শ্রেষ্ঠ সুন্দরি যুবতি নারীদের দেবার লোভ দেখাতে শুরু করে।
• রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কাফিরদের শত ষডযন্ত্র ও ভয় ভীতির মধ্যেও ঘোষনা করলেন” যদি আমার দান হাতে সূয’ আর বাম হাতে চন্দ্র ও এনে দেয়া হয় তারপর ও আমি সত্যপ্রচার থেকে বিরত থাকবোনা”।কাফিরদের কোনো লোভ লালসা রাসুলুল্লাহকে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি।মক্কায় যারা পৌত্তলিকতা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল কুরাইশরা তাদের উপর অবন’নীয় কষ্ট দেয়।কিন্তু ইসলাম এর শাশ্বত বানী যারা একবার গ্রহন করেছে তাদেরকে শত কষ্ট দিয়েও ইসলাম থেকে পৌত্তলিকতায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি তারা।
• ৬২০ সালে মুহাম্মদ (সাঃ)এর জীবন সংগীনি বিবি খাদিজা (রাঃ) এবং পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চাচা আবু তালিব ইন্তেকাল করেন। জীবনের কঠিন মূহূতে’ প্রিয় মানুষদের হারিয়ে রাসুলুল্লাহ শোকে মুষড়ে পড়েন।বিবি খাদিজা ছিলেন রাসুলের দুঃসময়ের স্ত্রী আর চাচা আবু তালিব হলেন শৈশবের অবলম্বন,যৌবনের অভিভাবক এবিং নবুয়ত পরবতী’ জিবনের একনিষ্ঠ সমথ’ক। তায়েফ বাসিদের কাছে ইসলাম এর সুমহান বানী পৌঁছাতে গেলে পাথরের আঘাতে তারা রাসুলকে ক্ষত বিক্ষত করে। অবশেষে ৬২২ সালে ২ জুলাই ইতিমধ্যে মদীনায় ইসলামী আন্দোলনের উপর্যুক্ত ক্ষেত্র তৈরী হয়।মদিনা বাসীরা রাসুলুল্লার কাজেকর্মে বিরাট পরিবত’ন এনে দেয়।এতদিন মক্কায় ইসলাম ছিল কেবল মাত্র একটি ধর্ম ।কিন্তু মদিনায় এসে ইসলাম সুদৃঢ ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়।এই সুবাদে রাসুলুল্লাহ মদিনা থেকে গোত্র প্রথার পাথ্’ক্য তুলে দেন।এ সময় মদিনায় পৌত্তলিক ও ইহুদীরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল।
• মুহাম্মদ (সাঃ) মনে প্রানে অনুভব করতে পেরেছিলেন যে যেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক বাস করে সেখানে সকল সম্প্রদায়ের সমথ’ন ও সহযোগীতা না পেলে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই তিনি সেখানে সকল সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ে একটি সাধারনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং একটি আন্তজা’তিক সনদপত্র ও স্বাক্ষরিত করেন যা ইসলাম এর ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত।পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম লিখিত সংবিধান বা শাসনতন্ত্র। উক্ত সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক নিরাপত্তার এবং ধমী’য় স্বাধীনতার, জান মালের ও ইজ্জতের কথা উল্লেখ ছিল।রাসুলুল্লাহ হন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সভাপতি। তিনি যে দুরদুশি’ ও সফল রাজনীতিবিদ এখানেই তার প্রমান মেলে।মদীনার সনদ নাগরিক জিবনে আমুল পরিবত’ন আনে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্থাপিত হয় ঐক্য। যে মানুষ সারা জীবন মানবতার কল্যানে কাজ করে গেছেন সেই মানুষটির পাওয়ার পাল্লা নিতান্ত ই কম।মৃতু্্য শয্যায় যাওয়া পয’ন্ত সারা জীবন যিনি কষ্টই করে গেছেন ;নিয়ে যাননি কিছুই। অবশেষে ৬৩৩ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল ৬৩ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান রবের সান্নিধ্যে।পৃথিবীকে চির বিদায় দিয়ে চলে যান সেই মহামানব ;যার সৃষ্টি না হলে এই জাহানের কিছুই হত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button